Saturday, March 22, 2014

মনের অজান্তে (Moner Ajanta)

পরিচ্ছদ-১
মাঝ রাতে চন্দনার ঘুম ভেঙে গেল। ওদিকে বৈশাখী কাঁদছে চুপিচুপি। চন্দনা আর বৈশাখী দুজন খুব ভাল বন্ধু। একজন আরেকজনকে বেশিক্ষণ ভুলে থাকতে পারে না। একসময় চন্দনা রাতে ভাল ঘুমোত না। সারাক্ষণ শুধু চিন্তা ছিল অন্রর-কে নিয়ে। চলতি কথায় অন্তর খুব ভাল ছেলে। এই যেমন, কাউকে কষ্ট দিতে চায় না। মুর্দা কথা সবাইকে হাসি-খুশি দেখতে চায়। চন্দনা প্রায় রাতে অন্তর-কে কল করে। একথা সেকথা, আরো অনেক জানা, না-জানা-অজানা কথা বলতে থাকে।
শুরুটা তাদের এমন ছিল যে, কেউ বিশ্বাস করবে না ঘটনাটি সত্য। একদিন সবজি বাজারে মটরশুটি কিনছিল চন্দনা। হাতে ছোট একটি ব্যাগ, কিছু গাজর ও মশলার একটি প্যাকেট। অন্য ব্যাগে একটা আস্ত মুরগীর খন্ড-বিখন্ড টুকরাও ছিল। বলা বাহুল্য, অন্তর-এর চোখে আবার ম্যাগনিফায়িং গ্লাস আছে যার বদৌলতে সে বুঝতে পারল ব্যাগে মুরগীর মাংশ। আসলে অন্তর-এর উড়ে এসে জুড়ে বসাটা ভাল লাগল না চন্দনার। অর্থা- আধুনিক যুগে কেউ আবার ফুলকপি দিয়ে প্রেম নিবেদন করতে পারে সেটা কারোর ধারনাই ছিল না। তা আবার ভরা বাজারের মাঝে। অন্তর কিছুটা লজ্জা পেয়েছে সেটা চন্দনা বুঝতে পারল। কিন্তু প্রেমিক মন মানে না কোন বাধা। মুদি দোকান থেকে একটি কলম নিয়ে বাজারের লিস্টে নিজের সিম নম্বরটি লিখে খুঁজতে শুরু করল চন্দনা-কে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল সিম নম্বরটির নিচের লেখা ছিল- 'ফুলকপিটি কি আনেক ভারি? দশ মিনিট অপেক্ষা করুন গোলাপ এন দেব।' এই একটি কথার কারণে চন্দনা বাজারে আরো কিছুক্ষণ ঘুরতে থাকে। ঠিক দশ মিনিটের ভিতরে অন্তর গোলাপ নিয়ে হাজির। ফুলটা হাতে নিয়েই চন্দনা বলল-'ফুলকপি তো ভালই ছিল, রান্না করে খাওয়া যেত।' এরপর দুজন দুদিকের রাস্তা ধরল। কিন্তু অন্তর-এর অন্তর থেকে গেল চন্দনার নিকট। রাতে দুজন ফোনে কথা বলে। বেশ কিছু দিন যাওয়ার পরে তারা বিয়ে করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পড়াশুনা শেষ হয়ানি কারো। কি হবে তাহলে? বছর দুয়েক পরে অন্তর এম.এ শেষ করবে আর চন্দনা বি.এ শেষ করবে। সিদ্ধান্তের বড় অভাব হয়ে গেল। আসলেই এই বয়সটা সিদ্ধান্তহীনতার মতনই। তবুও হাল ছাড়ার পাত্র-পাত্রী নয় কেউ।


পরিচ্ছদ-২ 
বৈশাখী বড় লাজুক প্রকৃতির। ভালবাসা কি জিনিস সে জানে না। তবু কোথা থেকে উড়ে এসে বসল ভালবাসার রঙিন প্রজাপতি। বলতে পারেন মাঝ রাতে পূর্ণিমার চাঁদ। মূল ব্যাপারটা হল- কেউ যদি তার দিকে তাকায় তাহলে সে মনে করে তাকে সে পছন্দ করে, আবার কেউ যদি হাসে তবে মনে করে তাকে উপহাস করছে। দ্বিধা-সংশয় নিয়ে কাটে এই আরকি। কিছুদিন হল কে যেন অচেনা নম্বর থেকে তাকে কল করে প্রেম নিবেদন করেছে। সে ভাবল বাড়িতে জানাজানি হলে পড়াশুনা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। তবুও মন বলে কথা। ছেলেটিকে না দেখেই বিভিন্ন কথার জাল বুনতে শুরু করে। দখিনা বাতাসে উড়ুউড়ু মন চলতে থাকে নাও প্রেমে সাগরে। আনেক রাত পর্যন্ত জেগে তাদের কথা চলে। আবশেষে অদেখার মুক্তি মিলবে সেই ভরসায় দেখা হবে বৈশাখী মেলায় বৈশাখীর সাথে ছেলেটির। কিন্তু নিয়তির কি খেলা। বদলে দিল সম্পূর্ণ চিত্রের বৈচিত্র। যে কথাটি গোপন ছিল তা ফাস হয়ে গেল। বৈশাখীর মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্র নিজতেজ হতে শুরু করল। এতদিন যার সাথে তার কথা হয়েছে সে বিবাহিত। লাজুক বৈশাখী পান্তা-ইলিশের মত হারিয়ে যেতে বসেছিল। কিন্তু চন্দনা ও অন্তর-এর সাথে দেখা হওয়ায় বেঁচে গেল এ-যাত্রায়। 
তারা তিনজন একত্রে বসে সিদ্ধান্ত নিল, কে কি করবে। সামনের জৈষ্ঠে চন্দনা ও অন্তর বিয়ে করবে। কিন্তু বৈশাখী বাধা দিল। বৈশাখী বলল, দুটা বছর অপেক্ষা কর চন্দনা। যদি প্রকৃত ভালবেসে থাকিস তবে তোদের কেউ আটকাতে পারবে না। লাজুক বৈশাখীর মুখে একথা শুনে অবাক হয়ে গেল চন্দনা। চন্দনা আরো অবাক হল যখন বৈশাখী বলল- জীবনকে সাজাতে হলে আগে একটা কর্মসংস্থান দরকার। আর দুজনকেই সমান অগ্রাধিকার দিতে হবে কর্মের প্রতি। এই একটি বছর ভালভাবে পড়াশুনা করে একটি কর্মে সেটেল্ট হতে হবে। এখন বিয়ে করলে দুদিন পর ঠোকাঠুকি শুরু হবে। - বৈশাখীর কথায় অন্তর তার ভুল বঝতে পারল। আসলেই পড়াশুনা শেষ না করে বিয়ে করা উচিত হবে না। তাছাড়া একটা কর্মেরও প্রয়োজন আছে।
এরকম অদ্ভুত কথা শুনে বৈশাখী-কে রহস্যময়ী মনে হতে লাগল চন্দনার নিকট। এদিক ওদিক ঘুরে তারা বাড়ি ফিরবে এমন সময় একটা রিক্সার আঘাতে বৈশাখীর শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে গেল। গাছের শুকনো পাতার মত মুখটা মলিন হয়ে গেল বৈশাখীর। চন্দনা বুঝতে পারল, বৈশাখীর মন খারাপ। একটু পাশে দাঁড়িয়ে অন্তর ও চন্দনা কি যেন আলাপ করে নিল। তারপর তিনজনে একটা শপিংমলে গেল। অন্তর ও চন্দনা বৈশাখী-কে একটা গিফট কিনে দিল। একথা সেকথা বলার পর দিন শেষে বাড়ি ফিরল। বাইরে থেকে খেয়ে আসায় আর খাওয়ার প্রয়োজন হল না তাদের। রাতে ঘুমিয়ে পড়ল তারা। হঠা স্বপ্ন দেখে জেগে উঠল চন্দনা। দেখল বৈশাখী তাকে কিছু একটা বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না। এমন সময় বৈশাখী-কে কল করল চন্দনা। কল রিসিভ করতেই চন্দনা বৈশাখী-কে বলল- গিফটা কেমন হয়েছে রে! বৈশাখী না দেখেই বলল, ভাল। কিছুক্ষণ পর ফোনটা রেখে দিল এবং গিফট খুলে লাল একটা শাড়ি দেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করল।




গল্পটি ভাল লাগলে শেয়ার করবেন।
তাহলে এরকম ছোট গল্প খুব শিঘ্রই পাবেন। 
(এডমিন)

No comments:

Post a Comment